প্রুফ (Proofreading) রিডিং কি? প্রুফ রিডিংয়ের নিয়ম এবং প্রয়োজনীয়তা
প্রুফ রিডিং (Proofreading) কি?
প্রুফ (Proof) ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ প্রমাণ। আর Reading মানে পড়া বা পাঠ করা। মূলত গ্রন্থ, পুস্তিকা, পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা যে কোনো কম্পােজে বা লেখায় বিদ্যমান ত্রুটি দূর করে লেখা নির্ভুল করে তোলার জন্য সেই লেখাটি সংশোধন করে নেওয়ার জন্য পুনঃপাঠকেই প্রুফ রিডিং (Proofreading) বলে। প্রুফ রিডিং (Proofreading) করতে হলে লেখাটি পড়তে হয় এবং এর পাঠক বা Proofreading এর দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তিকে প্রমিত বা মান ভাষা সম্পর্কে সম্যক অবগতি রাখতে হয়।
গ্রন্থ রচনা, প্রকাশনা বা কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে যারা কম্পােজের সঙ্গে যুক্ত, প্রুফ-সংশোধন তাদের জন্য একটি অত্যাবশ্যক বিষয়। প্রুফ-সংশোধনের সময় আধুনিক প্রমিত বানানরীতি ও শব্দচয়ন সম্পর্কে ধারণা না থাকলে প্রুফরিডিং বা সংশোধনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে। কম্পােজার অথবা যিনি প্রুফ-সংশোধন করেন উভয়ের কাছে ত্রুটিমুক্ত বা প্রমিত শব্দ বা বানান সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে মুদ্রিত গ্রন্থ বা copy-টি ভুলভ্রান্তি পূর্ণভাবে পাঠকের হাতে চলে যেতে পারে। পাঠক এমন লেখা পড়ে লেখক, প্রকাশক, প্রুফ-সংশােধক সবার প্রতি ভুল ধারণা নেওয়া খুবই স্বাভাবিক। এর ফলে অক্ষরে ছাপা লেখার অনেক ভুল ও ত্রুটিযুক্ত বিষয় ছড়িয়ে পড়তে পারে সর্বত্র। সে কারণেই লেখক, প্রকাশক, কম্পােজার এবং যিনি প্রুফ দেখবেন— সকলেরই প্রুফ দেখার নিয়ম সম্পর্কে যথার্থ ধারণা থাকা একান্তভাবে উচিত।
প্রুফ রিডিং (Proofreading) এর বৈশ্বিক নিয়ম :
প্রুফ-সংশোধনের কাজটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশে একই নিয়মেই করা হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে Indian Standards Institution প্রকাশনার সুবিধার্থে প্রুফ-সংশোধনের নিয়মাবলি নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি প্রুফ’ বা লেখা সংশোধনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নিয়মকানুন বিচার-বিশ্লেষণ করে আধুনিক ও যুগােপযােগী একটি সর্বভারতীয় নিয়মাবলি (Proof Corrections for Printers and Authors) প্রণয়ন করেন। বলা যায়, পরবর্তীকালে এটিই প্রুফ রিডিং (Proofreading) এর বৈশ্বিক নিয়মে পরিণত হয়। আমাদের দেশেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সামান্য কিছু রদবদল করে সর্বভারতীয় নিয়মকেই অনুসরণ করা হয়।
প্রুফ রিডিংয়ে যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হয় :
মুদ্রিত কোনো কিছু (যেমন- খবরের কাগজ, পত্রপত্রিকা, বই, অভিধান, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ইত্যাদি) কারও সামনে উপস্থাপন করার পূর্বে তা প্রেসে বা কম্পিউটারে ছাপিয়ে নিতে হয়। প্রেসের কম্পােজিটর (বর্তমানে কম্পিউটার অপারেটর) মেশিনের অক্ষরে তা আবার লেখেন। লেখার পর কাগজে ছাপ তোলেন। এ ছাপ তোলার কাগজটিই হলো প্রুফ। অর্থাৎ লেখকের লেখার একটি প্রমাণ বা প্রুফ (Proof) । কম্পােজিটর মেশিনে লেখার সময় লেখকের লেখা হুবহু লিখেছেন কি না তা মূল লেখকের লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হয়। তখন যদি লক্ষ করা যায় কম্পােজিটর কিছু অংশ বাদ দিয়েছেন, কিংবা বানানে ভুল করেছেন, অথবা হস্তাক্ষর না বুঝতে পেরে অন্য শব্দ কম্পােজ করেছেন, তখন ওইসব ত্রুটি সংশোধন করাই প্রুফ-সংশোধনের কাজ। প্রকাশক মহলে Proof এর বাংলা ‘মুদ্রণিকা’ যা থেকে মুদ্রণ করা হয়। সুতরাং প্রুফ-সংশোধন অর্থ- মুদ্রণিকা সংশোধন।
বাংলা ভাষায় প্রুফ রিডিংয়ে যেসব বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয় :
শুধু কম্পােজিটর বা কম্পোজ যিনি করে থাকেন, সোজা বাংলায় বললে, লেখাগুলো যিনি ছাপার অক্ষরে কম্পিউটারে টাইপ বা কম্পোজ করে থাকেন, তিনিই ভুল করেন – বিষয়টি এমন নয়; বরং পাণ্ডুলিপিতে স্বয়ং মূল লেখকও তথ্য-উপাত্ত, বানান, শব্দ বা বাক্য গঠন ইত্যাদিতে ভুল করতে পারেন। কাজেই Proof-reader বা প্রুফ সংশোধনকারী ব্যক্তিকে শুধু কম্পােজিটরের ভুল সংশোধন করলেই চলে না, সেইসঙ্গে লেখকের তত্ত্ব, তথ্য, বাক্য, শব্দবিন্যাস ইত্যাদিতে ত্রুটি থাকলে তাও সংশোধন করতে হয়। বাংলা ভাষায় প্রুফ রিডিংয়ের ক্ষেত্রে সমাস-সন্ধি, ণত্ববিধান, ষত্ববিধান ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সমস্যার নিরসনেও তাকেই মনোযোগ দিতে হয়।
প্রুফ-সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা :
প্রুফ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা যে অপরিসীম এই কথাটি বুঝিয়ে বলার সম্ভবত প্রয়োজন হয় না। কারণ, পত্র পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা গ্রন্থে যদি তত্ত্ব, তথ্য কিংবা বানান ইত্যাদিতে ভুল থাকে তাহলে অগণিত পাঠকের হাতে পৌঁছাতে পারে ভুলভ্রান্তিযুক্ত লেখা, এর ফলে এই ভুলগুলোই তারা পাঠ করার ফলে তাদের জ্ঞান লাভে থেকে যেতে পারে ত্রুটি- যা নিঃসন্দেহে মারাত্মক একটি ব্যাপার। কাজেই নির্ভুল জ্ঞান লাভের প্রয়োজনে পত্র পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা গ্রন্থ যা-ই হোক না কেন, তা নির্ভুলভাবে প্রকাশ করা অতীব জরুরি। আর নির্ভুল বই পত্র ছাপার পূর্বশর্ত হলো প্রুফ কপির মধ্যে কোনো ভুল না থাকা।
অন্যদিকে যদিও কোন লেখকের পাণ্ডুলিপির যথাযথ কম্পােজ হওয়া/না হওয়া যাচাই করাই প্রুফ সংশোধন, তবু আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখার মত রয়েছে, যেমন- বই হোক বা পত্রিকা, যা-ই হোক, মুদ্রিত কোনো লেখা জনসাধারণ্যে প্রকাশ পেলে প্রশাসনিক, সামাজিক, ধর্মীয় বহু ক্ষেত্রে তার বিস্তৃতি ঘটে এবং ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য ছাপাখানা আইন (Press Act) -এর আমলযােগ্য অপরাধের আওতাভুক্ত হতে পারে। কাজেই প্রুফ-সংশোধনের সময় এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রুফ-সংশোধনের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হয় :
প্রুফ-সংশোধনের সময় সংশােধকের সাবধান হওয়া একান্ত দরকার। লেখকের সম্পর্কে বলা হয়- ‘কালি-কলম-মন, লেখে তিনজন’। কিন্তু প্রুফ-সংশােধকের বেলায় চোখ ও মনের সংযোগ, সেইসঙ্গে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা একান্ত প্রয়োজন। কোনো শব্দের ওপর নজর পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে বানানটি ঠিক কি না, এ বাক্যে শব্দটির প্রয়োগ যথার্থ হয়েছে কি না ইত্যাদি। প্রুফসংশােধকের আরেকটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, একজন প্রুফ-সংশােধক যা পড়বেন (বই, খবরের কাগজ যেটিই হোক), সেখানে কয়টা ভুল হয়েছে তা যেন তার চোখ এড়িয়ে না যায়।
প্রুফ-সংশোধনের নিয়ম :
প্রুফ-সংশোধনের সময় ভুলকে চিহ্নিত করা এবং সেটি সংশোধন করাই আসল কাজ; তবে জানার ঘাটতির জন্য অনেক সময় শুদ্ধটাও সংশোধিত হয়ে অশুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। কম্পােজের সময় কোনো জায়গায় অতিরিক্ত বর্ণ, শব্দ, বাক্য কম্পােজ হয়। আবার কখনো বর্ণ, শব্দ, বাক্য বাদও পড়ে যায়। বানানের ভুল তো থাকেই। কিছু সাংকেতিক চিহ্ন আছে যা ব্যবহার করে সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সাংকেতিক চিহ্ন না জানলে ভুলটি অন্যত্র শুদ্ধ করে লিখে টেনে দিলেও কাজ চলে।
পাণ্ডুলিপি :
প্রুফ-সংশোধনের নিয়মবলি-নির্ধারক কমিটি সূচনা থেকেই পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত বিষয়ে কিছু নির্দেশনা বা প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাবগুলো ছিল :
১. পাণ্ডুলিপির বাম দিকে কমপক্ষে তিন সেন্টিমিটার মার্জিন রাখতে হবে।
২. পরবর্তীকালে মূল পাণ্ডুলিপির কোনো পরিবর্তন বা পরিমার্জন নিয়ে যাতে কোনো সংশয় বা জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রথম পাণ্ডুলিপি বা কপি সযত্নে পরিমার্জন করে প্রেসে পাঠাতে হবে।
৩. কোনো নকশা বা Diagram, Illustration বা ছবি থাকলে তা নির্দেশনাসহ পৃথকভাবে পাঠাতে হবে।
৪. ফুটনোট যথাসম্ভব বর্জিত হবে। আবশ্যক ফুটনোট পাণ্ডুলিপির যথাস্থানে দুটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে লিখে দিতে হবে। তবে ফুটনোট বেশি হলে তা পৃথক কাগজে লিখে দিতে হবে।
৫. লেখক/ সম্পাদক ইচ্ছে করলে পাণ্ডুলিপির মার্জিনে কোথায় কেমন টাইপ হবে তার নির্দেশনা দিতে পারেন।
৬. লেখক যেকোনো সময় পাণ্ডুলিপি ছাপানোর পূর্বে সংশোধনী দিতে পারেন। তবে ছাপার পরও সংশোধনী দেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে তা কীভাবে হবে তা লেখক ও প্রকাশক নির্ধারণ করবেন।
প্রুফরিডারের দায়িত্ব :
কোনো গ্রন্থ বা কপি নির্ভুল ছাপানোর জন্য কম্পােজারের যে রকম দায়িত্ব, প্রুফরিডারের দায়িত্ব তার চেয়ে কম নয়; বরং অনেক বেশি। কারণ, কম্পােজার যা কম্পােজ করেন, তার ভুল ধরা হলো প্রুফরিডারের দায়িত্ব। অন্যদিকে সাধারণ কম্পােজারের চেয়ে প্রুফরিডারকে অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ মনে করা হয়। একজন দক্ষ প্রুফরিডারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় একটি গ্রন্থ বা কপি নির্ভুল মুদ্রিত হতে পারে। তাই প্রুফরিডারকে অবশ্যই প্রমিত বানান, ত্রুটিমুক্ত শব্দচয়ন এবং আধুনিক বাংলা ভাষার পর্যায়ক্রমিক গঠন পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে। প্রুফরিডারকে অবশ্যই হতে হবে ধৈর্যশীল ও তীক্ষ্ণদর্শী। বর্তমান সময়ে প্রফেশনাল প্রুফরিডার ছাড়াও অনেক গ্রন্থকার নিজের গ্রন্থের প্রুফ সংশোধনের কাজ নিজেই করে থাকেন। গ্রন্থকার নিজের গ্রন্থের প্রুফ দেখলে মুদ্রিত গ্রন্থটি বহুলাংশে নির্ভুল হয়। লেখক বা প্রফেশনাল প্রুফরিডার যিনিই প্রুফ-সংশোধনের কাজ করবেন, তাকে কতকগুলাে নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন-
১. প্রুফ হাতে আসার সাথে সাথে সংশোধন কাজ শুরু করা, যাতে সংশোধিত প্রুফ ফেরত পাঠাতে বিলম্ব না হয়।
২. প্রুফ-সংশোধনের সময় মূল পাঠের কোনো পরিবর্তন বা সংযোজন বাঞ্ছনীয় নয়।
৩. লেখার কোনো অংশ যাতে পাণ্ডুলিপি হতে বাদ না পড়ে, সেজন্য মূল পাণ্ডুলিপির সাথে মিলিয়ে প্রুফ-সংশোধনের কাজ করতে হবে।
৪. সংশোধনের কাজটি নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করার জন্য একজন সহকারী নেওয়া যেতে পারে, যিনি পাণ্ডুলিপি পড়বেন এবং সাথে। সাথে প্রুফরিডার প্রতিটি লাইন মিলিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করবেন।
৫. প্রুফ-সংশোধনের সংকেত চিহ্নগুলো প্রুফ-শিটের স্ব-স্ব লাইনের বাঁ-দিকের মার্জিনে পরপর লিখতে হবে। প্রয়োজনে ডান দিকেও লেখা যাবে।
৬. মার্জিনে পৃথক বোঝাতে প্রত্যেক সংকেত চিহ্নের পরে একটা হেলান স্ট্রোক (/) দিতে হবে।
৭. বিভাগ ও উপবিভাগের শীর্ষকগুলাের জন্য নির্দেশিত মাপের হরফ ব্যবহার করা হয়েছে কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৮. মূল পাঠের প্রত্যেক অনুচ্ছেদ, উদ্ধৃতি ও উদাহরণ যথাযথ বিন্যস্ত আছে কি না, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৯. সংখ্যা, পরিসংখ্যান ও তারিখ নির্ভুল রয়েছে কি না, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
১০. সংযুক্ত চিত্র, চিত্রের নম্বর (যদি থাকে), সরণির পরিচয় ও ক্রমিক সংখ্যা ঠিক আছে কি না, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
প্রুফ-সংশোধন এ ব্যবহৃত সাংকেতিক চিহ্ন সমূহ :
প্রুফ-সংশোধন কাজে প্রধানতঃ প্রায় ৪৩ টি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং তাদের ব্যবহারও শিখে নেয়ার চেষ্টা থাকবে।
প্রুফের সংকেতসমূহ :
প্রুফ রিডিংয়ের জন্য দেশি-বিদেশি বেশ কিছু সংকেত রয়েছে। উভয়ের সমন্বয়ে যে সংকেতগুলো আমরা সচরাচর ব্যবহার করি সেগুলো হলো-

সুযোগ রয়েছে প্রুফ রিডিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ারও
বর্তমানে প্রুফ রিডিং অনেকের জন্য ভালো একটি পেশাও। প্রুফ রিডিংয়ের চাকরিতে নিজের সৃজনশীলতা প্রদর্শনেরও সুযোগ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে নিজের সৃজনশীলতা দেখিয়ে কম সময়ে যাঁরা ভালো আয় করতে চান, তাঁরা প্রুফ রিডিংকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। সারা বছরই বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা, সংবাদপত্র ও প্রকাশনায় প্রুফ রিডার নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রয়োজন শুধু নিয়মিত খোঁজখবর রাখা।
প্রুফ রিডিংয়ে কাজের ক্ষেত্র :
প্রুফ রিডিংয়ের কাজটিকে আপাতত সহজ মনে হলেও এর দায়িত্বটা পালন করতে হয় অনেক সচেতনতার সাথে। কারণ, সম্পাদনার সর্বশেষ ধাপই হচ্ছে এই এটি। যেহেতু সর্বশেষ ধাপ, তাই কাজটা অনেক স্পর্শকাতর, অনেক সতর্কতার এবং অনেক দায়িত্বশীলতার। কারণ, তাঁদের হাত থেকে চোখ ফসকে ভুল চলে গেলে তা আর সংশোধনের সুযোগ থাকে না। অবশ্য বিশ্বের অনেক ভাষায় প্রুফ রিডিংয়ের কাজ বর্তমানে কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু আমাদের কথা ভিন্ন, আমাদের দেশে অন্যান্য অনেক বিষয়ের মত আমরা আজ অবধি নিজেদের ভাষার বানান ইত্যাদির ক্ষেত্রেও বহুধা বিভক্ত। নানান পদ্ধতির বানান ফলো করা হয় এখানে। মিডিয়া হাউসগুলো নিজস্ব বানানরীতি অনুসরণ করে, লেখকেরাও ভিন্ন ভিন্ন বানান রীতি অনুসরণ করে থাকেন। ফলে আমাদের দেশে প্রুফ রিডিংয়ের কাজে কম্পিউটার আজও তার স্থান করে নিতে সক্ষম হয়নি, যার ফলে এই ক্ষেত্রটি চলে আসছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই, যার জন্য এখানে দক্ষ প্রুফ রিডারের যথেষ্ট চাহিদা বর্তমানেও বিদ্যমান। লেখকেরা আলাদা আলাদা বানানরীতি অনুসরণ করেন বলে তাঁদের লেখার ধারাবাহিকতা ও স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থায় প্রুফ রিডারদের চাহিদা ভিন্ন রকম হতে পারে। এসব বিবেচনায় রেখেই প্রুফ রিডারকে বুঝতে হবে কোন লেখক এবং কোন হাউস কোন বানানরীতি অনুসরণ করে, সেটা মেনে তাকে কাজ করতে হবে।
আমাদের দেশের প্রধান প্রধান প্রকাশকদের অধিকাংশেরই ঠিকানা রাজধানী ঢাকার বাংলা বাজারে। সংগত কারণে বাংলা বাজার কেন্দ্রিক প্রকাশনা সংস্থাগুলোয় প্রুফ রিডারদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কারণ, সেখানে কারিগরি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। লেখা কম্পিউটার বা ওয়ার্ড ফাইলে নেওয়ার সময় ভেঙে যায়, সেগুলো সঠিকভাবে সম্পাদনার জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞ প্রুফ রিডারদের প্রয়োজনীয়তা দিনকে দিন বাড়ছেই।
বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা ছাড়াও প্রুফ রিডার হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে সংবাদপত্র, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে। এ ছাড়া প্রোডাকশন হাউসগুলোয় নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন ধরনের পাণ্ডুলিপি সংশোধনের জন্য প্রুফ রিডার নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রুফ রিডিংয়ে যোগ্যতা :
প্রুফ রিডিংয়ে ভালো করতে চাইলে প্রথমত প্রচুর পড়তে হবে। এই পেশায় আসতে হলে অধিক পরিমাণে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বিশেষ করে সাহিত্যবিষয়ক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ পেশায় অ্যাকাডেমিক শিক্ষাসনদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। নিয়মিত অভিধান পড়তে হবে, যেন প্রয়োজনের সময় দ্রুত সঠিক বানানটি বের করা যায়। প্রুফ রিডিংয়ের চাকরিতে নিজের সৃজনশীলতা দেখানোর সুযোগ আছে। পাশাপাশি মনোযোগ দিয়ে স্বল্প পরিশ্রমে সম্মানজনক উপার্জন করা সম্ভব। বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও কনটেন্ট রাইটিং হাউসে এই পেশায় দক্ষ জনবল দরকার হয়।
প্রুফ রিডার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে নিজের জানাশোনার আগ্রহ থাকা দরকার। শুদ্ধ করে বানান লেখার খুঁটিনাটি বিষয় আয়ত্তে রাখতে হবে। বানানের ক্ল্যাসিক ও আধুনিক ফরম্যাট সম্পর্কেও থাকতে হবে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট ধারণা।
প্রুফ রিডারের চাকরির সন্ধান পাওয়া যাবে যেভাবে :
সাধারণত প্রুফ রিডার নিয়োগের জন্য গণমাধ্যম কিংবা চাকরির ওয়েবসাইটে খুব বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। পরিচিতজনদের মাধ্যমেই এইসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ নিয়োগ দেওয়া হয়। যাঁরা এই পেশায় আসতে চান, তাঁদের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব থেকে যাঁরা প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ করেছেন বা বর্তমানে করছেন, সাধারণত তাঁদের মাধ্যমেই নতুন কর্মী নেওয়া হয়।
প্রুফ রিডারদের বেতন ভাতাদি :
বাংলা বাজার কেন্দ্রিক প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্টদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রকাশনা সংস্থাগুলো সাধারণত মাসিক ও চুক্তিভিত্তিক প্রুফ রিডার নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ফর্মাভিত্তিক হিসেবেও প্রুফ রিডারকে কাজ দেওয়া হয়। মাসিক বেতন সাধারণত ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। যাঁর কাজ যত ভালো, তাঁর আয় তত বেশি। ভালো কাজ করে কেউ কেউ মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকাও আয় করে থাকেন বলে জানা যায়। আর ফর্মাভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে বর্তমান ২০২২ সালের হিসেবে সর্বনিম্ন প্রতি ফর্মা ২০০ টাকা দেওয়া হয়। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রতি ফর্মা এক হাজার টাকাও দেওয়া হয়। গবেষণাধর্মী বইগুলোর ক্ষেত্রে প্রুফ রিডারদের আয় অনেক বেশি হয়। কারণ, সেগুলোর পৃষ্ঠা বেশি এবং তাতে তথ্যও থাকে অনেক বেশি। এসব সংশোধনের জন্য অধিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রুফ রিডার দরকার পড়ে।
অভিজ্ঞতা অর্জন করে আপনিও হতে পারেন একজন দক্ষ প্রুফ রিডার :
খুবই ইন্টারেস্টিং একটি কাজ। ইচ্ছে করলে আপনিও আসতে পারেন এই পেশায়। অনেক শিক্ষিত বেকার যাদের কাজ নেই, আমার মতে তারা এই সুন্দর কাজটিকে পেশা হিসেবে নিয়ে ভালো করতে পারেন। নিজেদের সৃজনশীলতা তুলে ধরার পাশাপাশি সম্মানজনক আয়ের পথও করে নিতে পারেন তারা।
প্রুফরিডার সফটওয়্যার দিয়ে দ্রুত সময়ে ও খুব সহজেই বানান চেক করা যায়।
প্রুফরিডার সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন
